নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইন হাই স্কুল এন্ড কলেজে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে সরকারি বিধি মোতাবেক বেতন-ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন দুই সহকারী শিক্ষিকা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে বছরের পর বছর তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য না পেয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ শিক্ষিকা রুকসানা আখতার (জীব বিজ্ঞান) ও আফরোজা পারভীন (কম্পিউটার শিক্ষা) প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করেন।
এ সময় তাঁরা লিখিত বক্তব্য বলেন, ২০০৩ সালের ৭ ডিসেম্বর পুলিশ লাইন হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগদানের পর থেকে তারা পূর্ণ সময়ে পাঠদান করে এলেও আজ পর্যন্ত কোনো মাসেই সরকারি বিধি অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাননি। একাধিকবার লিখিত আবেদন করেও মেলেনি কোনো সাড়া।
দুই শিক্ষিকা অভিযোগ করেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন সরকারি অনুদান ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করার কথা বলেও হলেও তারা উপেক্ষিত থেকেছেন। অথচ ২০০২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া শর্তসাপেক্ষ এমপিও অনুমোদনের নথিতে ছিলো সকল শিক্ষকের বেতন সরকারি অংশ থেকে দেওয়া হবে।
তাঁরা দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালার একাধিক ধারা লঙ্ঘন করেছে। ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে এক বিশেষ সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত সেই সভার সিদ্ধান্ত তাদের জানানো হয়নি।
শিক্ষিকাগণ বলেন, এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি ও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে একবার দেখা হলেও পরে আর কোনো যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচী পালন করেন এবং এই কর্মসূচী পালনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ৮মাস পর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
তাঁরা জানান, গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় তাঁরা ২৬ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করলেও ২৯ জুন হঠাৎ প্রধান শিক্ষক তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেন এবং ডিউটি রেজিস্টার থেকে তাদের নাম বাদ দেন। বিষয়টি তারা লিখিতভাবে সভাপতি ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি। প্রেস ব্রিফিং এ শিক্ষকাগণ প্রশ্ন তোলেন “আমরা শুধু নারী বলেই কি আমাদের প্রতি এত অবহেলা, আমরা অপমান ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছি ?”
তাঁরা বলেন, “আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছি, ক্লাস নিয়েছি, পরীক্ষা নিয়েছি। শুধু পাইনি আমাদের প্রাপ্য পাওনা। এখন সেই দায়িত্ব থেকেও আমাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে -এটা কেমন বিচার?”
তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতন এবং চাকুরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি দ্রæত সমাধান করতে হবে। ইতোমধ্যে তাঁরা উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেছেন, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান বলেন, “আমরাও চাই ওই দুই শিক্ষিকা তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা যেন পেয়ে যান। তবে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, তাই আমার পক্ষে এ বিষয়ে তেমন কিছু করা সম্ভব নয়।”
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ওই দুই শিক্ষিকা যে বিষয়ে দাবি করেছেন সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি লিখেছি, মন্ত্রণালয়ের চিঠি প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/