টাঙ্গন ডেস্ক:রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশ প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে গণপরিবহনে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চিহ্নিত চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে।
গাবতলী টু যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী আট নম্বর ব্যানার অর্থাৎ গাবতলী লিংকসহ প্রতিটি নগর পরিবহন থেকে ৪০০ টাকা হারে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই সংঘবদ্ধ চিহ্নিত চাঁদাবাজ চক্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাবতলী লিংকের একজন চালক অভিযোগ করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন গাবতলী লিংকের বাস চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। গত ৫ ই আগষ্টের আগে একদল চাঁদাবাজ চক্রকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা চাঁদা দিতে হতো। ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর কিছুদিন এই চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি মিললেও ফের নতুন একটি চিহ্নিত প্রভাবশালী চাঁদাবাজ চক্র গাবতলী লিংকের প্রতিটি বাস থেকে ৪০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করছে। সরকার পতনের পর চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়া তো দূরে থাক, আরো কয়েকগুণ বেড়েছে।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এক বাসচালক বলেন, এই চিহ্নিত চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে রুবেল নামে একজন প্রভাবশালী চাঁদাবাজ। তার নেতৃত্বে জসিম উদ্দীনসহ আরো ৮/১০ জন সক্রিয় সদস্য এই চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। এখন রাস্তাঘাটে আয় ইনকাম কম। এই টাকা দিতে খুব কষ্ট হয়। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি করে গাড়ি চালিয়ে মাঝে মাঝে চাঁদার পরিমান টাকা নিয়ে ফেরা তো দূরের কথা, খালি পকেটে বাসায় ফিরতে হয়। সেদিন বাসায় জ্বাল-চুলাও জ্বালাতেও বেগ পেতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একজন বাসচালক বলেন, এরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনে ব্রীজের নিচে, মাজার রোডের মাথাসহ একেকদিন একেক পয়েন্টে দাড়িয়ে প্রতিটি বাস থেকে ৪০০ টাকা হারে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে এই চক্রের সদস্যরা। না দিলে অনেক সময় তারা শারিরীক মানসিকভাবে নির্যাতন করে চালক শ্রমিকদেরকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এক চালক সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, শুধুমাত্র গাবতলী লু্িংকের ৬৪ টি বাস থেকে ৪০০ টাকা হারে দৈনিক প্রায় ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এরা। অর্থাৎ প্রতি মাসে শুধুমাত্র গাবতলী লিংক থেকেই প্রায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি। অন্যান্য ব্যানারের নগর পরিবহনের শত শত গাড়ি থেকে লাইন খরচের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি করে তারা প্রতিমাসে কত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সেটি আপনারাই হিসেব করে নিবেন। এর থেকে বেশি কিছু আর বলতে পারবোনা। তাহলে আগামীকাল থেকে আমি আর গাড়িই চালাতে পারবোনা। মা, বউ বাচ্চাদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
শুধু তাই নয়, সিটি কর্পোরশনের নামে তারা আলাদা আরো ৫০ টাকা হারে প্রতিটি গাড়ি থেকে চাঁদা নেয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে এই চাঁদাবাজ চক্রের সক্রিয় সদস্য অভিযুক্ত জসিম উদ্দীন প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন, থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মদদেই তারা একাজ করেন। এ টাকার ভাগ তারা একাই পান না। সুতরাং সংবাদ প্রকাশ করে কোনো লাভ হবে না।
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত ও চাঁদাবাজ চক্রের মূল হোতা এ প্রতিবেদকের প্রতি চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ৫ ই আগষ্টের আগে যারা এই চাঁদা তুলতো,তাদের নিয়ে তো কোনো খবর প্রকাশ হয় নাই? তখন সাংবাদিকরা কোথায় ছিলো?
তিনি প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে আরো বলেন, যারা আগে চাঁদা তুলতো তাদের কাছ থেকেই আমরা এটা বুঝে নিয়েছি। সরকার পতনের পর তারা পলাতক বিধায় স্বেচ্ছায়ই আমাদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। চাঁদা তো তুলতেই হবে। না হলে গাড়ি রাস্তায় চলেনা। চাঁদা না দিলে সার্জেন্টরা বিভিন্ন জায়গায় আমাদের গাড়ি আটকে রাখে। তখন আমাদের লাইনম্যানদের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক সমস্যার সমাধান করতে হয়। আমাদের প্রায় ১৫ জন লাইনম্যানকে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়। পুলিশ প্রশাসন, রাজনতিক নেতা, লাইনম্যানদের বেতন, আমাদের অফিস ভাড়া বাবদ মাসে কত টালা খরচ হয় তা কি সাংবাদিকেরা জানেন?
তিনি আরো বলেন, এ চাঁদাবাজির ঘটনা সকলেই জানে। আপনারা সাংবাদিকেরা এবিষয়ে সবাদ প্রকাশ করে আমাদের কিছুই করতে পারবেন না। আপনাদের যা ইচ্ছে লিখেন। যা পারেন করেন। আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাথে সেটা বুঝে নেবো।
এবিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের মিরপুর বিভাগের দারুসসালাম জোনের গাবতলী পুলিশ বক্সের ইন্সপেক্টর (টিআই) মোঃ মাহফুজ বলেন, এবিষয়ে আমার কাছে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। যদি পুলিশ প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে কেউ পরিবহন খাত থেকে চাঁদাবাজি করে থাকে, সেটি থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) জানান। তারা তদন্ত করে সত্যতা পেলে অবশ্যই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ তো কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা রাখে না।
এবিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোঃ মাকসুদুর রহমান বলেন, এবিষয়ে আমি অবগত নই। আমি এখনই দারুসসালাম থানার ওসিকে জানাচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিচ্ছি।
সোহেল/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/