নিউজ ডেস্ক:মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে তিনি এই বাজেট উপস্থাপন করেন।
বাজেট বক্তব্যের শুরুতে তিনি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর এক সংকটকাল অতিক্রম করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। মাত্র ১০ মাসের কম সময়েই সরকার অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে।”
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আসবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধ করা হবে ৩৯ হাজার কোটি, ফলে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি এবং ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা আসবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ১ লাখ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিগত অর্থবছরের তুলনায় ছোট বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, এবার প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে মানুষের মৌলিক অধিকার, জীবিকার নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন এবং বৈষম্য হ্রাসে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শুল্ক-কর কাঠামোয় পরিবর্তনের ফলে কিছু পণ্যের দাম কমতে পারে যেমন: চিনি, স্যানিটারি ন্যাপকিন, ইনসুলিন, ক্যানসারের ওষুধ, ই-বাইক, কম্পিউটারের বড় মনিটর, উড়োজাহাজ ভাড়া ইত্যাদি। অন্যদিকে, সিগারেট, রড, মোবাইল ফোন, গৃহস্থালি পণ্য, সাবান-শ্যাম্পু, শিশুদের খেলনা, ওটিটি কনটেন্ট, প্রসাধনী ও বিভিন্ন দেশে তৈরি ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ‘তারুণ্যের উৎসব’ আয়োজনেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া যুব উদ্যোক্তাদের ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
বাজেট ভাষণে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “প্রবৃদ্ধি নয়, এখন আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করা। এই ভিতই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নির্মাণে সহায়ক হবে। আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, প্রতিটি মানুষ পাবে সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা।”
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মার্কিন শুল্ক, মুদ্রা বিনিময় হারের পরিবর্তনসহ নানা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই এবারের বাজেট পরিকল্পিত হয়েছে। এই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তোলাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
এর আগে সোমবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করা হয়।
সোহেল/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/