নিউজ ডেস্ক:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বিদায় হজের ভাষণকে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য ও বহুমাত্রিক তাৎপর্যমণ্ডিত বক্তৃতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, বরং মানবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও এই ভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রবিবার রাতে তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ড. আসিফ নজরুল লেখেন, “আচ্ছা, বিদায় হজের ভাষণ আমাদের পড়াশোনার ভেতর তেমন চর্চিত হয় কি? মানবসভ্যতার ইতিহাসে যেই ভাষণ বা বক্তৃতাগুলোর কালজয়ী বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে, আমার দৃষ্টিতে সেগুলোর অন্যতম হলো বিদায় হজের ভাষণ। আমি কিন্তু শুধু রিলিজিয়াস পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলছি না, হিউম্যান সিভিলাইজেশনের সামগ্রিক সবকিছুর বিবেচনাতেই কথাটা বলছি।”
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো এই ভাষণের নামই জানে না, কিংবা জানলেও এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না। এমনকি মুখে মুখে ধর্মচর্চা করা অনেক তথাকথিত ধার্মিক ব্যক্তিও এ ভাষণের শিক্ষাগুলো আত্মস্থ করেন না।
বিদায় হজের প্রেক্ষাপট
ড. আসিফ নজরুল স্মরণ করিয়ে দেন, দশম হিজরি বর্ষে (৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায় সোয়া লাখ সাহাবিকে নিয়ে হজ পালন করেন, যা ছিল তাঁর জীবনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ও শেষ হজ। এ হজেই তিনি আরাফাতের ময়দানে, মসজিদে নামিরায়, জাবালে রহমত এবং মিনায় তাঁর জীবনের শেষ ভাষণ প্রদান করেন। তিনি ভাষণ শুরু করেন এই হৃদয়বিদারক বাক্য দিয়ে: “হে জনতা, আমার কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনো, আমি জানি না, এবারের পর তোমাদের সঙ্গে এই জায়গায় আর একত্র হতে পারব কিনা।”
এই বাক্যটি থেকেই বোঝা যায়, রাসুল (সা.) তাঁর বিদায়ের পূর্বাভাস দিয়ে গিয়েছিলেন।
ভাষণের দশটি গুরুত্বপূর্ণ দিক
ড. আসিফ নজরুল তাঁর দৃষ্টিতে ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দশটি মূল পয়েন্ট তুলে ধরেন:
১. আল্লাহর একত্ব ও জবাবদিহিতা
– “আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তোমাদের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে।”
২. জাতিগত ও বর্ণ বৈষম্যের অবসান
– “আরব-অনারব, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ—কারও কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই।”
৩. সুদের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা
– “জাহেলি যুগের সুদ রহিত করা হলো। সকল ধরনের সুদ হারাম।”
৪. রক্ত প্রতিশোধের অবসান
– “জাহেলি যুগের রক্তের দাবি রহিত করা হলো।”
৫.আমানতের দায়িত্ব– “কারো কাছে যদি আমানত থাকে, তা যথাযথভাবে ফিরিয়ে দাও।”
৬. নারীর প্রতি দায়িত্ব ও সম্মান
– “স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তাদের অধিকার রক্ষা করো।”
৭. উত্তরাধিকার সংরক্ষণ
– “আল্লাহ প্রত্যেকের অংশ নির্ধারণ করেছেন—সেটা আদায় করো।”
৮. পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ
– “মুসলিম, মুসলিমের ভাই। কারও প্রতি জুলুম করো না।”
৯. কর্মচারী/অধীনস্থদের প্রতি সদ্ব্যবহার
– “তোমরা যা খাবে, তাদেরকেও তা-ই খাওয়াবে, যা পরবে, তা-ই পরাবে।”
১০. দুই চিরন্তন নির্দেশনা
– “আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ—এ দুটো আঁকড়ে ধরলে পথভ্রষ্ট হবে না।”
সোহেল/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/