ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলে ঠাকুরগাঁওয়ে আহত জুলাই যোদ্ধাদের চেক বিতরণ ও যোদ্ধা নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ উঠেছে সদর ইউএনও, কমিটির সদস্য ও ছাত্র প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। আন্দোলনে অংশগ্রণ না করেও যোদ্ধা হয়েছেন। আবার কেউ সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আহত হয়েও যোদ্ধা হতে পারেননি।
সারাদেশের ন্যায় কোটা সংস্কার এবং হাসিনা সরকারের পতনের দাবীতে ঠাকুরগাঁওয়েও দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে ছাত্র-জনতা। এই আন্দোলনে আহত হন শত শত ছাত্র-জনতা। পরিবর্তীতে ফ্যাসিট হাসিনা সরকারের পতন হলে জুলাই যোদ্ধাদের আর্থিক সহয়তার ঘোষনা দেন অন্তবর্তীকালীন সরকার। সে অনুযায়ী সারাদেশের সাথে ঠাকুরগাঁওয়ে ৩৪৮ জন জুলাই যোদ্ধার নাম উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু আহত জুলাই যোদ্ধাদের চেক বিতরণ ও যোদ্ধা নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বঞ্চিতরা। এছাড়াও চেক বিতরণের সময় প্রশাসনের কোন প্রতিনিধির উপস্থিতি দেখা যায়নি। জেলায় ৩৪৮ জন জুলাই যোদ্ধার মাঝে ১ লাখ টাকা করে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যিনি সরাসরি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের গোয়ালপাড়া মহল্লার রাকিব হোসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন আমরা যারা যুদ্ধ করেছি, সামনের কাতারে ছিলাম। আমাদের কোন প্রাধান্য নাই। অন্যান্য লোক আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে। যাদের আমরা দেখি নাই। আমরা ষ্টুডেন্টরা কিছুই পাইনি। আমরা আবেদন করে তালিকাভ‚ক্ত হতে পারি নাই। কলেজ পাড়া মহল্লার বাসিন্দা নূরে-আলম বলেন ৩,৪,৫ আগষ্ট আমি, আমার ছেলে-মেয়ে, বউ সবাই আন্দোলনে ছিলাম। আমার ছেলের শরীর থেকে ২টা গুলি হাসপাতালে বের করা হয়েছে। আজকে এসে দেখতেছি আমরা যারা গুলি খেলাম, আহত হলাম, মার খেলাম তাদের কোন চিহ্ন নাই। যাদের কখনো দেখি নাই তাদের হাতে সুন্দর কাগজপত্র ৪ তারিখের এগুলো করলো কিভাবে ?
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের মাহফুজ আনাম বলেন আমি ঢাকার উত্তরায় আন্দোলনে অংশ নেই। সেখানে আমি গুলিবৃদ্ধ হই। আমার মাথা ফাটে, পাঁ ভেঙ্গে যায়। আমি সেখানে চিকিৎসা নেই। পরে আমি এখানে এসে কমিটির কাছে কাগজপত্র জমা দেই কিন্তু আমার নাম আসেনি। যাদের ক্ষমতা আছে তাদের নাম আসছে। জগন্নাথপুর গ্রামের উজ্জল হোসেন বলেন আন্দোলনের সময় আহত হয়ে আমরা জেলে ছিলাম। আমাদের নামে কয়েকটা মামলা হয়েছিল। এমন কিছু লোক টাকা পেয়েছে যারা আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত। তারাই আবার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আবার অনেকে আন্দোলনে না থেকে ৪ আগষ্ট নাপা ট্যাবলেটের কাগজ এনে যোদ্ধা হয়েছেন। ৪ আগষ্ট হাসপাতালের কাগজ কিভাবে পেল এটাই আমার প্রশ্ন ?
জগন্নাথপুর বাহাদুর পাড়া গ্রামের নাহিদ হাসান জানান, আমরা জুলাই আন্দোলনে সামনে থেকে নের্তৃত্ব দিয়েছি। আমরা কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। যারা জেলার দায়িত্বে আছেন তারা ছেলেদের সাথে কন্ট্রাকে আসেন। ১ লাখ টাকা পেলে সেখান থেকে ২০-৩০% টাকা তাদের দিতে দিবে। যারা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেইনি তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে সামনের কাতারে থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। পুলিশের গুলি খেয়েছি ছাত্রলীগের ছেলেদের নির্যাতন সহ্য করেছি। তারা আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে কোর্ট চত্বরে। আজকে তারা আমার কোন কথাই শুনেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুলাই যোদ্ধা প্রশ্নের জবাবে জানান, কারা টাকা চাচ্ছে ? উত্তরে বলেন যারা শুরু থেকেই এটার সাথে জড়িত তাদের মধ্যে রয়েছে রাকিব ও নিশাত। তিনি আরো বলেন, ইনারা শুধু আমার কাছে টাকা চায়নি এমন শত শত ছেলের কাছে টাকা চেয়েছেন এবং নিয়েছেন।
বঞ্চিত আরেক শিক্ষার্থী বলেন ৪ আগষ্ট আমি ১৯ টা গুলি খেয়েছি এখনো আমার শরীরে ২ টা গুলি আছে। আমি কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিনা। উপজেলায় কাগজ দিয়েছিলাম সেই কাগজ বাতিল হয়ে গেছে। যারা আন্দোলন করে নাই তারাই জুলাই যোদ্ধাদের কার্ড পাচ্ছে।
অপরদিকে ছাত্র প্রতিনিধি শাহদাত হোসেন নিশাতের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এব্যাপারে কিছ্ইু জানেন না বলে জানান। কিন্তু এক ভিডিওতে দেখা গেছে ছাত্র প্রতিনিধি নিশাত ও রাকিব তাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বøাড ব্যাংক সেন্টারে জুলাই যোদ্ধাদের এনে চেক বিতরণের আগে কত পার্সেন্ট কমিটিকে দিতে হবে এবং আগামীতে আরও সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অঙ্গিকারবদ্ধ করে নেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারী বিশাল রহমান লিখেন “জুলাই যোদ্ধার তালিকা ও সহায়তা নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে তোঘলকি কান্ড ? দালালের মাধ্যমে টাকা খেয়েছে প্রশাসন”।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা ঃ রকিবুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন ৪ আগষ্ট অনেকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অনেকের লিপিবদ্ধ করার সুযোগ ছিল না। আবার অনেকে ৫ আগষ্টের পরে হাসপাতালে আহতের কথা বলে চিকিৎসা নেন। তবে জুলাই যোদ্ধা নির্বাচনের বিষয়টি একান্তই কমিটির ব্যাপার। কমিটি কিভাবে করেছে সেটা তারাই বলতে পারবে।
তালিকায় ভূলের কথা শিকার করে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইরশাত ফারজানা বলেন ভ‚ল গুলো সংশোধনের জন্য প্রয়োজনিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আর অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়ে যদি তথ্য প্রমান পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/