নিউজ ডেস্ক:অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদ বর্তমানে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের পরিচালিত ঘৃণার রাজনীতির সর্বশেষ শিকার। পুলিশ ও বিচার বিভাগের নীরব পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। তাঁর বিরুদ্ধে একটি এমন অভিযোগ আনা হয়েছে, যা তিনি করেননি। এখন তাঁকেই নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে। এটি “নির্দোষ প্রমাণের আগে দোষী সাব্যস্ত” করার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
মাহমুদাবাদ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য যথাসাধ্য ব্যাখ্যা দিলেও, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সন্দেহ ঘনীভূত করেছে। আদালত তাঁর দুটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে মন্তব্য করেছে এমনকি বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠনের আগেই। পোস্টদুটির শব্দ সংখ্যা মাত্র ১৫৩০, আর সেই দুটি লেখাই এখন তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় “প্রমাণ” হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই পোস্টগুলোতে মাহমুদাবাদ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে কড়া সমালোচনা করেছেন এবং ভারতের পাকিস্তানবিরোধী সামরিক অভিযানের প্রশংসাও করেছেন। তিনি দুই নারী সামরিক মুখপাত্র—যাদের একজন মুসলমান—তাঁদের ভূমিকাকে প্রশংসা করেছেন, যাঁরা বিশ্বমঞ্চে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু একইসঙ্গে মাহমুদাবাদ সতর্ক করেন যে, ভারতের মুসলমানদের ওপর চলমান নিপীড়ন যদি বন্ধ না হয়, তাহলে এই অন্তর্ভুক্তির কথামালার সবই লোক দেখানো হয়ে থাকবে।
বিজেপির ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মুখপাত্রও তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মাহমুদাবাদ ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ মন্তব্য করেছেন।
তবে, মাহমুদাবাদের মতো বক্তব্য অতীতে বহু ব্যক্তি বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করেছেন। হঠাৎ করেই হরিয়ানার নারী কমিশনের প্রধান রেনু ভাটিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, মাহমুদাবাদ ওই দুই নারী কর্মকর্তাকে ‘অপমান’ করেছেন। এই অভিযোগ অনেককেই বিস্মিত করেছে। মাহমুদাবাদ তাঁর আইনজীবীদের মাধ্যমে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেও, ভাটিয়া কোনও নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্য তুলে ধরতে পারেননি। এক টেলিভিশন উপস্থাপক বারবার জিজ্ঞেস করলেও, তিনি শুধু বলেন—“পোস্ট পড়ে আমার মনে হয়েছে ওটা অপমানজনক।” তাঁর মতে, কোন শব্দ আপত্তিকর, তা খুঁজে বের করা পুলিশের কাজ, তাঁর নয়।
এই ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করে যে, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতটা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যেখানে কোনও বক্তব্যের মর্ম স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও, তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিকৃত করে তোলা হচ্ছে এবং বিচার বিভাগও সেই প্রবণতায় অবদান রাখছে, সেখানে সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা বড় প্রশ্নের মুখে।
সোহেল/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/