তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি :
জেলার তেঁতুলিয়ায় প্রথমবারের মতো বাড়ির আঙিনায় ভিনদেশি জাতের আঙুর চাষ করে চমক দেখালেন মেহেদী হাসান নামের এক শিক্ষার্থী। শখের বশে আমেরিকা ও ইউক্রেন থেকে আসা এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফলটির চারা সংগ্রহ করেছিলেন এ শিক্ষার্থী। পরে বাড়ির আঙিনায় আঙুর চারা লাগালে বছর না হতেই গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ধরেছে সুস্বাদু রসালো আঙুর। মাচায় ঝুলে থাকা আঙুরের থোকা দেখতে মেহেদীর বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছেন প্রতিবেশিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ পাতার আড়ালে বাড়ির আঙিনায় মাচায় (ঝাংগি) থোকায় থোকায় ঝুলছে কাচা পাকা আঙুর। গাছের পরিচর্যা করছিলেন কৃষি উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান। বাইকুনুর ও একেলো জাতের দুটি গাছের প্রতিটি থোকায় ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের আঙুর ধরেছে। এর আগে এ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির আঙুর চাষ হলেও সেগুলো ছিলো টক জাতের ,এবার প্রথম সুস্বাদু মিষ্টি আঙুর চাষ হওয়ায় তার বাড়িতে ছুটে আসছেন অনেকে।
তিনি আঙুর চাষের পাশাপাশিবাড়ির আঙিনায় লাগিয়েছেন বিভিন্ন সবজির গাছ একই সাথে তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রজাতির ৩৭ টি আঙুর চারা সংগ্রহ করেছে, পর্যায়ক্রমে এই চারা গুলো সম্ভাবনা যাচাই করতে তিনি সেগুলো রোপন করবেন বলেও জানান ।
মেহেদী হাসান পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা কৃষ্ণকান্ত জোত ( সরদারপাড়া) গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মজাহারুল ইসলামের ছেলে। প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়ির আঙিনায় আঙুর চাষ করে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফলনও হয়েছে কাংখিত। প্রথমবারের মতো আঙুরের ফলনে সাফল্য পেয়ে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছেন মেহেদী হাসান।
জানা গেছে, অল্প পরিশ্রম ও স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক আঙুর চাষে। বাড়তি কোনো খরচ নেই। জৈব সার প্রয়োগের পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যায় একটি গাছে ৪০-৫০ বছর ফলন পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া বছরে একটি গাছে ৩ বার ফল আসে। প্রতিটি গাছে দেড় থেকে ২ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। পরীক্ষাম‚লক আঙুর চাষের পাশাপাশি আঙুরের চারা কাটিং, গ্রাফটিং, গুটি করে করতে শুরু করেছেন। সামনে এসব বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন ফল চাষি শিক্ষার্থী মেহেদী।
মেহেদী হাসান জানান, ছোট বেলা থেকেই কৃষি প্রেমিক। আমেরিকা ও ইউক্রেন থেকে পরিচিত একজন আঙুরের জাত সংগ্রহ করার পর তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করেছিলাম। বাইনা শুরুতে বাবা-মায়ের এ নিয়ে হাজার বকাঝকা খেলেও আঙুরের চারা লাগিয়ে পরিচর্যা করতে থাকেন তিনি। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে চারা গাছ। থোকায় থোকায় ধরে ফল। আঙুর টক হলেও এ আঙুর মিষ্টি। এতে করে বাবা-মাও খুশি হয়ে সাপোর্ট দিতে থাকেন। আমার চাওয়া শিক্ষিত বেকাররা কৃষিতে মনোযোগ দিয়ে আঙুর লাগাতে পারেন। চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হলে এতে বেকারত্ব দ‚র হবে। আমাকে দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
মেহেদী আরও বলেন, ৩৭ প্রজাতির আঙুরের জাত সংগ্রহ করেছেন। এলাকায় আঙুর আবাদে খবরে প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থী ছুটে আসছেন । অনেকে কিনতে চান এ আঙুর। কেউ আঙুর টেস্ট করে সুমিষ্টতা পেয়ে উদ্ভুদ¦ হচ্ছেন আঙুর চাষে ।তেঁতুলিয়া কৃষি সম্প্রসারন কার্যালয় হতে কৃষি কর্মকর্তা এসে বাগান পরিচর্যা, রোগবালাই দমন, সেচ ও সার ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়েছেন ।
দর্শনার্থীরা বলছেন, আমাদের এলাকায় প্রথমবারের মতো মিস্টি আঙুর চাষ করেছে মেহেদী হাসান। আঙুর ফল টক হলেও মেহেদীর লাগানো আঙুর ফল সুমিষ্ট। আমরা দেখতে এসে অভিজ্ঞতা নিচ্ছি। আমরাও চাষ করবো।
মেহেদীর বাবা মজাহারুল ইসলাম বলেন, আমরা জানি আঙুর ফল টক। ১০ মাস আগে যখন ছেলেটা বাড়ির আঙিনায় বিদেশি জাতের দুটি আঙুরের চারা লাগালে তখন বকাঝকা করেছিলাম। যখন গাছগুলো বড় হয়ে ফল দিতে শুরু করলো, এখন খেয়ে দেখছি টক তো নয়, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এতে খুবই খুশি হয়েছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জীবন ইসলাম জানান , তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষ্ণকান্ত জোত ( সরদারপাড়া) গ্রামে শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান আমেরিকার বাইকুনুর ও একেলো জাতের আঙুর চাষ করেছেন। প্রথমবারের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এর ফলে তেঁতুলিয়ায় আঙুর চাষে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।
তিনি আরও বলেন আঙুর চাষ বাড়াতে পারলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করা যাবে। এ জাতটি ইউরোপ কান্ট্রিতে বেশ ভালো ফলন দেয়। এখানেও তাই দিচ্ছে। মেহেদীর মতো অন্য শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয় চাষিরা যদি এভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠে তাহলে আমাদের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/