নিউজ ডেস্ক:আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিচারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন চার নারী বিচারক। এর ফলে তারা আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং তাদের দেশটিতে থাকা সম্পদও জব্দ করা হবে। বিশ্লেষকদের মতে, আইসিসিকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের মিত্রদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তাই করব।” তিনি আরও বলেন, “আইসিসিকে যারা সমর্থন করে, তাদের অনেকের স্বাধীনতা কিন্তু আমাদের ত্যাগের ফসল। তারা যেন এই লজ্জাজনক আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।”

আইসিসি এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। তারা উল্লেখ করে, আদালত ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, “আইসিসির পক্ষপাতদুষ্ট বিচারকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে ধন্যবাদ।”

আইসিসির চার বিচারকের মধ্যে ছিলেন স্লোভেনিয়ার বেটি হোলার ও বেনিনের রেইন আলাপিনি গাঁসু, যাঁরা ২০২৩ সালের নভেম্বরে নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। আদালতের মতে, গাজায় হামলার সময় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়াকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে।

এছাড়া, পেরুর লুজ দেল কারমেন ইবানেজ কারাঞ্জা ও উগান্ডার সোলোমি বালুঙ্গি বসা আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে অনুমোদন দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আইসিসিকে দমন করার চেষ্টা। এতে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, যিনি একজন প্রাক্তন মানবাধিকার আইনজীবী, নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য গ্রেপ্তার নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, তারা আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে। অন্যদিকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান আইসিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করেছেন।

উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল আইসিসির সদস্য নয়। তবে পশ্চিমা মিত্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশ এবং আফ্রিকার বহু রাষ্ট্র এই আদালতের সদস্য। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এসব সদস্য রাষ্ট্রে গ্রেপ্তারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সোহেল/টাঙ্গন টাইমস