• শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

আগামীকাল থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রদর্শিত হবে ১১৯৭১ সেই সবদিন’

Reporter Name / ২৯৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঠাকুরগাঁও : হৃদি হক পরিচালিত ছবি ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ আগামী ১-৩ ডিসেম্বর হতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে ছবিটির শো। ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে নির্মিত ছবিটি ২০২৩ সালের ১৮ আগষ্ট মুক্তি পাবার পর দেশে-বিদেশে দর্শক ও গুণীজনদের মাঝে ব্যাপক ভাবে সমাদৃত হয়েছে।

বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাতে ইএসডিও প্রধান কার্যালয়, ঠাকুরগাঁওয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ বাংলা সিনেমার পরিচালক হৃদি হক।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান, অভিনেতা লিটু আনাম, ইকো-পাঠশালা এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. সেলিমা রহমান, অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ, ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী প্রমুখ।

শ্রদ্ধেয় নাট্যজন প্রয়াত ড. ইনামুল হকের গল্প ভাবনায় মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আরেকটি নতুন ছবি ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। নাটক, যুদ্ধ, প্রেম, পার্টি, গানসহ অনেক অনুষঙ্গ ভরা এক ছবি ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। গল্পের বয়ানে খানিক ধারাবাহিকতা হারানো এবং অগণিত চরিত্রের সমাহারে এক ছবি ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। ডকুমেন্টারির ছোঁয়া, ধারা বর্ণনা আর কিছু প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া এক ছবি। সবশেষে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবিচল আস্থারও এক ছবি ‘১৯৭১ সেই সব দিন’।

সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত এক পরিবারের গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে ছবিতে। দাদি, বাবা-মা, তিন ছেলে, দুই ছেলের বউ, ছোট ছেলের প্রেম ও প্রেমিকা, তাদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এবং পরিণতির ব য়ান আছে এই ছবিতে। একই পরিবারের বড় ভাই সাইদ বিয়ে ও ব্যবসার কারণে পাকিস্তানের প্রতি দুর্বল হয়ে ওঠে। সে বিয়ে করে এক শিল্পপতির মেয়েকে যে কিনা পাকিস্তানি ব্যবসায়ী ও সেনা কর্মকর্তাদের পার্টিতে যায়, ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ গান গায়। ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মেজ ছেলে সঞ্জু এবং নাটক ও রাজনীতি সচেতন ছোট ছেলে রঞ্জু জড়িয়ে যায় আন্দোলনে এবং শেষমেশ তারা যুদ্ধে চলে যায়। যুদ্ধকালীন বড় ছেলের নিজ ও শ্বশুরের পরিবার জড়িয়ে পড়ে দ্ব›েদ্ব। পরিবারভুক্ত এক সদস্য নেমে পড়ে রাজাকারগিরিতে। রাজাকারের কোনও শাস্তি না হলেও পরিবারের ছোট ছেলের আত্মাহুতির ভেতর দিয়ে ক্রমশ শেষ হয় ছবিটি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বাস্তবতা তুলে ধরতে গিয়ে অনেক সময় গল্পের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কোনও কোনও চরিত্রের পরিণতি নেই আবার কোনও চরিত্রকে কেন আনা হয়েছে ছবি দেখে সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। যেমন, পরিবারের মেজ ছেলে শিক্ষক সঞ্জুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস। যুদ্ধকালীন এক বাড়িতে এসে সে রাতের খাবার খায়। বাড়িওয়ালার কাছ থেকে সে জানতে পারে সেটা রাজাকার অধ্যুষিত গ্রাম। খাওয়ার মাঝখানে রাজাকাররা বাড়ি ঘিরে ফেললে সঞ্জুকে বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যেতে বলা হয়। পালানোর সময়ে বলা হয় মেয়েটাও সঙ্গে যাবে! মেয়েটা সাঁতার জানে না, কিন্তু চিঠি লিখে ছেলেদের পোশাক পরে নদীতে ঝাঁপ দেয়। বৃষ্টির ভেতরে অন্ধকারে চশমা বের করে ফেরদৌস সেই চিঠি পড়ে!

ছবিতে নাজিয়া হক অর্ষা নাটকের নন্দিনী। সে চিঠি লিখে দেয় সজীবকে। সজীব ধরা পড়ে পাকিস্তানিদের হাতে। অত্যাচারের কারণে তাকে কিছু দিন স্ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটতে হয়। অর্ষাকে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। চিঠি কিংবা অর্ষা চরিত্রের কোনও পরিণতি নেই ছবিতে, পরিণতি নেই আনিসুর রহমান মিলনের চরিত্রেরও। যে দৃশ্যে রঞ্জু অর্থাৎ আব্দুন নূর সজল মারা যায় সেই দৃশ্যে রঞ্জু রাজাকার রূপী রায়হানকে তার ব্যাগ দিয়ে পালিয়ে যেতে বলে। আবার নিজ স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে সাইদ যখন শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে আসে, তারপর ছবিতে তাকে আর দেখা যায় না।

প্রীতি ও সজলপ্রীতি ও সজল
তারপরও তেপ্পান্ন বছর আগের বাস্তবতাকে ফিরিয়ে আনার প্রাণান্তকর এক চেষ্টার ছবি ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। একাত্তরের যুদ্ধে ব্যবহৃত সামরিক অস্ত্র বা বাহন, সেই সময়ের দেয়াল লিখন ও রিকশার পেছনের ছবি, সেই সময়ের রাস্তাঘাট, ট্রেন বা গাড়ি কিংবা টেলিফোন, যুদ্ধের যেসব স্থির ছবি আমরা দেখি সেই আদলে দৃশ্য সাজানো বা মুক্তিযোদ্ধাদের ফিরে আসা একাত্তরের স্মৃতিকেই সামনে নিয়ে আসে। ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হলেও পঁচিশ মার্চ রাতের নির্মম হত্যাযজ্ঞ, সাধারণ মানুষের পলায়ন, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার, বুদ্ধিজীবী হত্যা, পাকিস্তানিদের পদলেহন, অনেক কিছুই টুকরো টুকরো মালার মতো গাঁথার চেষ্টা করা হয়েছে ছবিতে।

ছবিতে দেশাত্মবোধকসহ গান ব্যবহৃত হয়েছে কয়েকটি। পাকিস্তানিদের পার্টিতে ‘ইয়ে শ্যামে ঝালকায়ে’- উর্দু ভাষায় এই গানটি লিখেছেন চয়নিকা দত্ত এবং কণ্ঠ দিয়েছেন সঞ্চারি সেনগুপ্ত। এই পার্টিতে ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ গানটিও ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া ‘যাচ্ছ কোথায় কিছু না বলে’ গানটি লিখেছেন হৃদি হক এবং সুর করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ইশরাত এনি ও কামরুজ্জামান রনি। অন্য গানগুলো পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়েছে।

‘১৯৭১ সেই সব দিন’ ছবিতে অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, আবুল হায়াত, গীতশ্রী চৌধুরী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, শিল্পী সরকার অপু, ফেরদৌস, লিটু আনাম, তারিন জাহান, হৃদি হক, আনিসুর রহমান মিলন, নাজিয়া হক অর্ষা, সানজিদা প্রীতি, আবদুন নূর সজল, সাজু খাদেম, মৌসুমী হামিদ, জুয়েল জহুর, রাশেদা রাখী প্রমুখ। এরমধ্যে মুনমুন আহমেদ, তারিন, হৃদি হক, লিটু আনাম, আবদুন নূর সজল, সানজিদা প্রীতি ও সাজু খাদেম ভালো অভিনয় করেছেন।

ছবির শুটিং শুরু হয়েছিল ঠাকুরগাঁ ও মানিকগঞ্জে, তিন বছর আগে। ড. ইনামুল হক তখন বেঁচে ছিলেন। ইনামুল হকের জন্মদিনকে ঘিরে ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট। ছবির দৃশ্য ধারণে ছিলেন মেহেদী রনি এবং সম্পাদনার কাজ করেছেন কামরুজ্জামান রনি। দীর্ঘদিন পরে অভিনয়ে ফেরা লিটু আনাম এতে অভিনয় ছাড়াও শিল্প নির্দেশনা ও কোরিওগ্রাফি করেছেন। ছবিতে মনে রাখার মতো কয়েকটা সংলাপ আছে। অন্ধকারে জ্বলতে থাকা ল্যাম্প নিভে যাবার সময়কার সংলাপ- ২৫ মার্চ বাংলাদেশটাকেই অন্ধকার করে গেছে। পাকিস্তানিদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা পরিবারের বড় ছেলের এক সংলাপের জবাবে বাবার উত্তর- সম্রাট হলেও পরাধীনতায় কোনও সুখ নেই!

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com
https://slotbet.online/
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com