• রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারে রোদে গলছে সড়কের পিচ

টাঙ্গন টাইমস ডেস্ক / ১৬৯ Time View
Update : রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪
ছবি-ইন্টারনেট।

‘পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি/ তার সাথে এই মনটারে বেঁধে নিয়েছি’ মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের গাওয়া বাংলা সিনেমায় এই গানের মতো এখন ‘পিচ ঢালা পথ’ ভালবাসার অবস্থায় নেই। এখন সড়কে যানবাহন চালানো এবং পায়ে হাঁটতে গেলে রোদে গলে যাওয়া পিচে জুতা এবং যানবাহনের চাকা আটকে যায়। সড়ক-মহাসড়কের কাজ পেতে ঠিকাদারদের বিভিন্ন স্তরে ঘুষ দিতে হয়। ফলে নির্মাণে নিম্নমানের পিচ, বিটুমিন তথা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়। ফলে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে।

পিচ গলে যাওয়ায় সড়কে আটকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা; কমে যাচ্ছে যানবাহনের গতি। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক মহা সড়কে এতো নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে যে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাস্তার পিচ গলে পথচারীদের জুতা আটকে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, ভালো মানের বিটুমিন আমদানি করলেও সেগুলো প্রয়োগের পূর্বে বিভিন্ন হাত বদলের সময় ভেজাল মিশ্রিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। সস্তায় নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করার একটা প্রবণতা রয়েছে। বিটুমিন কোথায় কী ধরনের বৈজ্ঞানিক পরিবেশে ও তাপমাত্রায় রাখা হবে অথবা কী বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরিবহন করা হবে; সেসব নিয়মনীতিও মানা হয় না।

অবশ্য সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান দাবি করেন, মান যাচাই করে সড়কে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ নেই। সড়কে সাময়িকভাবে বিটুমিনের পাতলা স্তর ব্যবহার করা হয়, সেটাই সম্ভবত সমস্যার সৃষ্টি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু প্রভাব তো আছেই। আমরা নিশ্চিত নই যে এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক কোনো প্রভাব আছে কিনা, আমরা সেটি খতিয়ে দেখছি।

সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গরমে সড়কের পিচ বা বিটুমিন গলে যাচ্ছে। সড়কের পিচ গলে লেগে যাচ্ছে গাড়ির চাকার সাথে। সড়কে হেঁটে পার হতে গেলে জুতা আটকে যায়। গাড়ির চাকা আটকে গিয়ে গতি কমে যাচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ গলে যাওয়ায় যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এরই মধ্যে যশোর, গাজীপুর, শরিয়তপুর, বগুরাসহ কয়েকটি জেলার পাকা সড়কের পিচ বা বিটুমিন গলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যশোর জেলার পিচ গলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। সড়কের পিচ বা বিটুমিন গলে যাওয়ার কারণে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে এই তাপমাত্রায় রাস্তার পিচ গলছে কেন? ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাস্তার পিচ গলে যাওয়ার কারণে সড়কে ব্যবহৃত পিচের মান নিয়ে কথা ওঠেছে। নিম্নমানের পিচ ব্যবহারের কারণেই সড়কে ব্যবহৃত পিচ গলে যাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বেশির ভাগ সময় ৫২ থেকে ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকার পরও সড়কের পিচ গলে যায় না। আমাদের এখানে ভেজাল বিটুমিন ব্যবহার করা না হলে মাত্র ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ার কথা নয়। আমাদের দেশে সাধারণত সড়ক-মহাসড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয় তার মান ৬০-৭০ গ্রেডের। এই পিচের গলনাঙ্ক ৪৯-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে পিচ গলে যাওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০-৪১ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ায় ব্যবহৃত পিচের মান নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

অবাধেই দেশে আমদানি করা হয় নিম্নমানের ও ভেজাল বিটুমিন। কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই দেশের বাজারে ঢুকছে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদান। সড়কের স্থায়িত্বের জন্য ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও অধিক লাভের আশায় মাঠ পর্যায়ে এই গ্রেড ব্যতীত অন্তত আরও চারটি নিম্ন গ্রেডের বিটুমিন সড়কে ব্যবহার করা হয়। এসব বিটুমিনে মেশানো হয় গিলনোসাইডের মতো রাসায়নিক ও মাটি। নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি ও সড়কে ব্যবহার করার ফলে কোনো সড়কের মেয়াদকাল দুই থেকে তিন বছর হলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বেহাল দশা হয় কোটি কোটি টাকায় নির্মিত সড়কগুলোর। নিম্নমানের বিটুমিনের এলাস্টিসিটি বা পাথর ধরে রাখার স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ায় সামান্য বর্ষাতেই সড়কের পাথর আলগা হয়ে যায়। আবার একটু গরম বেশি হলে গলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। আমদানি করা বিটুমিনের মান সঠিকভাবে পরীক্ষা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক নির্মাণে জড়িত এক ঠিকাদার বলেন, কাজ পেতে কয়েক স্তরে ঘুষ দিতে হয়। সব স্তরে ঘুষ দিয়ে যে টাকা থাকে তার মধ্যে নিজের কিছু লাভ রেখে টাকা খরচ করা হয়। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। আগে রাস্তা তৈরি হতো কম। পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন অয়েল কোম্পানি থেকে বিটুমিন সংগ্রহ করা হতো। এখন প্রচুর পরিমাণ সড়কের কাজ হচ্ছে। সে কারণে তারা সে পরিমাণ সরবরাহ করতে পারছে না। একসময় ইরান থেকে বিটুমিন আমদানি করা হতো। এখন অবশ্য বন্ধ। ফলে দেশীয় সাধারণ গ্রেডের অর্থাৎ তরল বিটুমিন ব্যবহার করতে হয়। সঙ্গত কারণেই উচ্চ তাপমাত্রা সহনীয় বিটুমিন ব্যবহার করা হয় না। লোকাল মার্কেট থেকে নিয়ন্ত্রিত কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনতে হয়। তারা যে ধরনের বিটুমিন সরবরাহ করে, সেগুলো দিয়ে আসলে মানসম্মত সড়ক তৈরি সম্ভব নয়। এই কারণে বিটুমিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় কিংবা বেশি গরম পড়লে গলে যাচ্ছে।

সড়ক নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, দেশে দুই ধরনের বিটুমিন বাজারজাত হয়। একটি ৬০-৭০ গ্রেডের, যা অধিকতর গাঢ়। এই শ্রেণির বিটুমিন সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হলে তা উন্নত ও টেকসই হয়। আর ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন কিছুটা তরল। তরল বিটুমিন দিয়ে পিচ ঢালাই হলে সড়ক টেকসই হয় না। ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন গুণগত মানে তরল বা পাতলা হওয়ার কারণে গ্রীষ্মকালে সড়কগুলো গলে ঢিবির মতো উঁচু-নিচু বা ঢেউয়ের আকৃতি ধারণ করে। এতে সড়কে সৃষ্টি হয় অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। আবার বর্ষার সময় ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়।

তবে সড়কে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়-তা নিম্নমানের এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, মান ঠিক কি না তা নির্ভর করে পরীক্ষার ফলের ওপর। কেউ মুখে বলে দিল নিম্নমানের বিটুমিন তা ঠিক হবে না। সড়কে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে তার মান ঠিক না-তার প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। বিটুমিনের বিভিন্ন গ্রেড রয়েছে। আমরা সাধারণত আমাদের দেশের তাপমাত্রার আলোকে বিটুমিন ব্যবহার করে আসছি। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়।

এই বিটুমিন ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনীয়। এটা খারাপ মানের বিটুমিন নয়। কিন্তু এ বছর তাপমাত্রা একটু অস্বাভাবিক হওয়ার কারণে কোথাও কোথাও সড়কের পিচ গলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই আগামীতে বিটুমিনের গ্রেড পরিবর্তন করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিটুমিনের গ্রেড পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সওজ কর্তৃপক্ষের বিশেষজ্ঞ প্যানেল রয়েছে তারা আগামীতে তাপমাত্রা সহনীয় নতুন কোনো বিটুমিন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। বিশেষ করে ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনীয় বিটুমিন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতায় ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৫৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক।

আরএম/ টাঙ্গন টাইমস


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারে রোদে গলছে সড়কের পিচ”

  1. You actually make it appear so easy together with your presentation however I in finding this matter to be really something that I
    feel I would by no means understand. It kind of feels too complicated and extremely large for me.
    I’m looking ahead on your subsequent submit, I’ll attempt to
    get the dangle of it! Escape rooms

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com
https://slotbet.online/
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com