বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল। বৃহস্পতিবার অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করে এ সুপারিশ করেছে ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসা আইএমএফ মিশন।
আইএমএফ’র ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোনমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউ-এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে এ সুপারিশ তুলে ধরেন। তবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শকে জনবিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ। ভর্তুকি উঠানো হলে দাম বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের জন্য আর্থিক সংকট তৈরি করবে। তাদের শর্ত কোনোভাবেই মানা যাবে না বলে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করে মিশনের একটি অংশ, ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্রভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানায়। তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে যাবে সরকার। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি কমাতে পর্যায়ক্রমে এসবের দাম বাড়ানো হবে।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, আইএমএফ’র বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে ভর্তুকি কমানোর সুপারিশ অযাচিত ও আপত্তিকর। কারণ তারা দেখছে বাণিজ্যিক লাভ।
জনসাধারণের দিকে তাদের নজর নাই। ভর্তুকি তুলে দিলেই তো বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষ চরম আর্থিক সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, আইএমএফ’র বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ জনবিরোধী। বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ। দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ চাপ নিতে পারবে না। ভর্তুকি কোনোভাবেই তুলে দেয়া যাবে না। আর তাদের শর্তও মানা যাবে না বলে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে বৈঠকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে বাংলাদেশে আসা আইএমএফ মিশন। এছাড়া লক্ষ্যভিত্তিক খেলাপিঋণ কমানো বিশেষ করে সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং প্রক্রিয়াধীন থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইনগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকার যে ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে মিশন। তবে একীভূতকরণের পর ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা যেন খারাপ না হয়ে যায় এজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ প্রেক্ষিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানিয়েছে, এরই মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সজ্ঞায়িত করে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। এ আইনের ভিত্তিতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে উচ্চ খেলাপিঋণ কমিয়ে আনা, মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকটের সমাধান এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরই মধ্যে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, আগামীতে তা আরও জোরদার করে খেলাপিঋণ কমানোসহ আর্থিক খাতের উন্নয়ন করা হবে। একই সঙ্গে বৈঠকে খেলাপিঋণসহ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক চিত্র, ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট, ব্যাংকগুলোকে দেয়া পুনর্মূলধন এবং ব্যাংক তথা আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত আইন প্রণয়নের হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে জানানো হয় যে, ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে খেলাপিঋণের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপিঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ শতাংশ।
এ সময়ে সার্বিকভাবে কমলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ আগের প্রান্তিকের মতোই ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা রয়েছে। মোট ঋণের যা ২০.৯৯ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপিঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ঋণের ৫.৯৩ শতাংশ এবং গত সেপ্টেম্বর ছিল ৮১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা এবং ৭.০৪ শতাংশ।
আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির আওতায় আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপিঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকে ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামানোর লক্ষ্য রয়েছে।
গত ডিসেম্বর ভিত্তিক সার্বিক খেলাপিঋণ কিছু কমলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্য ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ না কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিশন। একই সঙ্গে লক্ষ্য অনুযায়ী খেলাপি কমাতে বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের খেলাপিঋণ কমাতে কার্যকরী পদক্ষেপের তাগিদ দিয়েছে।
আইএমএফ ২০২৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। এ সময় অন্য অনেক শর্তের মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ ৫টি আইন প্রণয়নের শর্ত দেয়া হয়। এসব আইন প্রণয়নের দায়িত্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। অন্য শর্তের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকে তা ৫ শতাংশের কম রাখা। ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তিতে ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা আগামী মাসে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও রিজার্ভ পরিস্থিতির অবনতির মূল কারণ আর্থিক হিসাবের ঘাটতি। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ৮.৩৬ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বিদেশি ঋণের সুদহার অনেক বেড়েছে। আবার টাকার বিপরীতে ডলার অনেক শক্তিশালী হয়েছে। যে কারণে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অনেকে এখন বিদেশি ঋণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আগের ঋণ পরিশোধের চাপ তৈরি হয়েছে। যে কারণে আর্থিক হিসাবে উন্নতি হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ্উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতের যথাযথ সংস্কার নিয়ে আইএমএফ যা বলছে আর যা বলবে, তা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। কিন্তু সরকার করেনি। তিনি বলেন, ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন আইন হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু ব্যাংকে পরিবারের আধিপত্য রয়েই গেছে।
নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিয়েছে কোনো শিল্পগোষ্ঠীর এক কোম্পানি খেলাপি হলেও অন্য কোম্পানি ঋণ পাবে, এটা তো ভয়ঙ্কর নীতি সিদ্ধান্ত। ব্যাংক খাতে সংকট এতটা গভীর যে এখন এক ব্যাংককে আরেক ব্যাংকের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে (একীভূত) সমাধানের চেষ্টা চলছে। এভাবে এ খাতের সংস্কার হবে না, লাগবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
আরএম/ টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/
how to buy generic clomiphene clomid chance of twins cheap clomiphene for sale how to buy clomiphene without prescription clomid nz prescription clomiphene order clomid pills at dischem price