জেলা প্রতিনিধি
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রত্যাশ্যায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তিন হাজার ৩৬২ জন। গড়ে একেক আসন থেকে নৌকা প্রত্যাশী ১১ জনের বেশি। তাদের মধ্য থেকে যোগ্যতম ব্যক্তিকে বেছে নিতে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড বসছে সকালেই। দলের হাইকমান্ড বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার বেলায় এবার মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয় সংগঠকদেরই মূল্যায়ন করা হবে।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছেন, এবারে কেবল দ্বাদশের বৈতরণী পার করা নয়, ভবিষ্যতের আরও দুয়েকটি জাতীয় নির্বাচনকেও মাথায় রাখছে আওয়ামী লীগ। ভবিষতের সেই ভাবনা থেকেই আগামীর যোগ্যদের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। ফলে দলের অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয়দের পাশাপাশি নতুন মুখ হিসেবে যারা মাঠপর্যায়ে সংগঠন হিসেবে জনপ্রিয়, তাদের অনেকের হাতেই এবার উঠবে নৌকা প্রতীক। দ্বাদশের পরেও যেন দুয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে না হয়, সেটিই এই বিবেচনার মূলে রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে চারবার রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। অভিজ্ঞতার আলোকে সব বিষয় মূল্যায়ন করেই ভবিষ্যতের করণীয় সামনে রেখে এগিয়ে চলেন তিনি। এবারের নির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচনেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনিই। এ ক্ষেত্রে কারও সুপারিশ শোনা তো দূরের কথা, সুপারিশ করার সুযোগই দিচ্ছেন না তিনি।
কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলছেন, শেখ হাসিনার কাছে দলের বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য নেতাদের তালিকা রয়েছে। তাদের সবার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ‘আমলনামা’ তথা প্রতিবেদনও রয়েছে তার কাছে। সেই ‘আমলনামা’ অনুযায়ীই তিনি যোগ্যদের মূল্যায়ন করবেন। এ ক্ষেত্রে তার প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১০টাতেই বসছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অফিসে সভায় সভাপতিত্ব করবেন সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দুই থেকে তিন দিন সভা বসতে পারে।
টানা মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। সেই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নিয়েছেন মনোনয়ন ফরম। চলচ্চিত্র তারকা, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সাবেক আমলা, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিকরা গত কয়েকদিনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের কয়েকজন নেতা দুই বা ততোধিক আসনের জন্য ফরম সংগ্রহ করেছেন। দলীয় নেতাদের বাইরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তিনটি আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। নিজ জেলা মাগুরার দুটি আসন মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ ছাড়াও সাকিব মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ঢাকা-১০ আসনের জন্য। এ ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন খাতের বহু আলোচিত মুখ। তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সাংগঠনিক দক্ষতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে এবারের মনোনয়নে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটা বিশাল রাজনৈতিক দল। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় আট থেকে ১০ জন যোগ্য প্রার্থী আছেন। তাদের সবাইকে তো আর নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। মনোনয়ন দিতে হবে যোগ্যতম ব্যক্তিকেই। আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সেই যোগ্যতম ব্যক্তির হাতেই নৌকা প্রতীক তুলে দেবে।’
মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে যোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, ‘এলাকায় জনগণের কাছে কে কতটা জনপ্রিয়তা, দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কতটা সক্রিয়তা রয়েছে— এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। তাছাড়া কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় কী ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। এলাকায় তার কোনো ধরনের বদনাম রয়েছে কি না, সেগুলোর ভিত্তি কী— এসব বিষয়ও উঠে আসবে আলোচনায়। আর এরকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এলাকাভিত্তিক জরিপ রয়েছে আমাদের। সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) এবার মনোনয়ন নিয়ে কারও কোনো কথাই শুনছেন না। কাউকে কথা বলার সুযোগও দিচ্ছেন না। তার কাছে সবার আমলনামা রয়েছে। সে আমলনামা অনুযায়ী প্রত্যেকে মূল্যায়িত হবেন।’
নানক আরও বলেন, ‘নেত্রী তো আগেও বিভিন্ন সময়ে স্পষ্ট করে বলেছেন, জনপ্রিয় মাঠ সংগঠকদের মূল্যায়ন করা হবে। কারণ আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচন হতে হবে শতভাগ অবাধ ও সুষ্ঠু। তাই প্রতিটি আসনে যোগ্যতম ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেবেন নেত্রী। তিনি কোনোভাবেই ওয়ান পার্সেন্ট আনফেয়ার কোনো কিছুও হতে দেবেন না।’
https://slotbet.online/