টাঙ্গন ডেস্ক:গুজরাটে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১ দুর্ঘটনার পরপরই টাটা গ্রুপ এক অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গ্রুপের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন নিহত প্রত্যেক যাত্রীর পরিবারের জন্য ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি আহতদের চিকিৎসা-সংক্রান্ত সকল খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এই সিদ্ধান্তে ভারতের কর্পোরেট মানবতাবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা গেছে। কাউকে কোর্টে যেতে হয়নি, দাবি জানাতেও হয়নি—টাটা নিজ দায়িত্ববোধ থেকে আগেই এগিয়ে এসেছে।
এই মানবিক উদ্যোগটি মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের তাজরীন গার্মেন্টসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, যা ঘটেছিল ১২ বছর আগে। তাজরীন কারখানাটিতে মোট ১,১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন, দুর্ঘটনার সময় কর্মরত ছিলেন ৯৮৪ জন। মাত্র ৫৮ জনের মরদেহ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়েছিল। বাকি মরদেহগুলো শনাক্ত না হওয়ায় তাদের দাফন করা হয় জুরাইন কবরস্থানে।
এখনো বহু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়নি। যারা পেয়েছে, তাদের পাওনাও ছিল অপ্রতুল। আহত শ্রমিক রেহেনা আক্তার কষ্টের সাথে বলেন, “আগুনে সব শেষ হয়ে গেছে। আগে কাজ করে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে পারতাম। এখন অন্যের উপর নির্ভর করে চলতে হয়—এটা কোন জীবন হলো?”
এই দুই ঘটনার তুলনায় উঠে আসে কর্পোরেট দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতার ফারাক। একদিকে টাটা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান নিজেদের সামাজিক দায়িত্বকে গুরুত্ব দেয়, অন্যদিকে বাংলাদেশের অনেক শিল্প মালিকের অবস্থান শুধুই মুনাফা কেন্দ্রীক। কর্মীদের দুঃখ-কষ্ট তাদের কাছে উপেক্ষিত।
এই তুলনা আমাদের ভাবায়—শ্রমিকের জীবন কি কেবল উৎপাদনের যন্ত্র? নাকি তাদের প্রতি আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে? মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এই ব্যবধান যেন শুধু একটি দেশের বা প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং গোটা সমাজ ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি।
(সূত্র: কামরুল হাসান মামুন, প্রফেসর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ফেসবুক স্ট্যাটাস)
সোহেল/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/