দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আজ মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন হলেও গতকাল পর্যন্ত মনোনয়ন ফরমই নেননি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। আজ মনোনয়ন ফরম নেবেন কি না তাও স্পষ্ট নয়। সূত্র বলছে, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশনের বিরোধ মেটেনি। রওশন এরশাদ তাঁর ছেলেসহ কয়েকজন অনুসারীর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু আসনে মনোনয়ন ফরম চান। তাতে সম্মত নন পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি চান- রওশন এরশাদ ও তার ছেলে রাহগির আলমাহি এরশাদ ওরফে সাদসহ সর্বোচ্চ তিনটি সুনির্দিষ্ট আসনে মনোনয়ন ফরম দিতে। এর মধ্যে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রংপুর-৩ আসনটি তাঁর ছেলে সাদের জন্য চান বেগম রওশন এরশাদ।
এদিকে এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ আসন নিয়ে দুই পক্ষই যার যার অবস্থানে অনড়। এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে ২৮৯টি আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনসহ ১২টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেনি জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জি এম কাদেরের বরাবরই অমত ছিল। তিনি বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু রওশন এরশাদ সবসময় বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। এ নিয়ে শেষ দিকে ‘নানা চাপে’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন জি এম কাদের। শর্ত দেন দলীয় মনোনয়নে কারও কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
যার পরিপ্রেক্ষিতে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২২ নভেম্বর ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে বলে জানান জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এর পাঁচ দিন পর ২৭ নভেম্বর ২৮৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ফাঁকা আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জ-৩, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সুনামগঞ্জ-৩, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মতিয়া চৌধুরীর শেরপুর-২ এবং রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ আসন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাস ছয়েক পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেলে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে বিভেদ শুরু হয়। একদিকে রওশন এরশাদ এবং অন্যদিকে জি এম কাদের। শেষ পর্যন্ত কাদের পক্ষই ‘লড়াইয়ে’ জেতেন।
জি এম কাদের চেয়ারম্যান এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক হন রওশন এরশাদ। তিন বছর পর থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদের নামে গত ৩০ আগস্ট আকস্মিকভাবে দলের কাউন্সিল ডাকা হয়। এর পাল্টায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও রওশনকে বাদ দিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেন। দলে বিবাদের মধ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের সভাপতিম-লীসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জাতীয় পার্টি। প্রায় দুই মাস পার হলেও জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার প্রশ্নে স্পিকারের কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ৩০ অক্টোবর দলটি সংসদ বর্জনের সিদ্ধান্ত জানায়। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত তারা সংসদে যোগ দেবেন না বলে জানানো হয়। অবশ্য পরদিনই সংসদ অধিবেশনে তাদের দেখা যায়।
এর আগে ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধা পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন।
ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক গত বছরের ৩০ অক্টোবর এক আদেশে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দায়িত্ব পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে ওই আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে জি এম কাদেরের করা আবেদন ১৬ নভেম্বর একই আদালত খারিজ করে দেন।
চলতি বছরের আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে তিন দিনের জন্য ভারত সফরে যান জি এম কাদের। তিনি ফেরার আগের দিন ২২ আগস্ট গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি আসে, সেখানে বলা হয়, জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ নিজেকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন।
এ নিয়ে দিনভর নাটকীয়তার পর রওশনপন্থি নেতা গোলাম মসীহ দাবি করেন, এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে রওশন এরশাদ কিছুই জানেন না। জাতীয় পার্টির ভিতরের দ্বন্দ্ব নিয়ে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। এদিকে, সম্প্রতি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ভোটে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন রওশন এরশাদ। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার অংশগ্রহণ থাকছে কি না জানা যাবে আজ।
আরএম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/